ঘাড়ের ব্যথা প্রায় সবারই কখনও না কখনও হয়। এটি হালকা থেকে শুরু করে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে বসে থাকা বা সঠিকভাবে না ঘুমানোর ফলে ঘাড়ে টান বা ব্যথা অনুভূত হয়। তবে কিছু সহজ উপায় এবং সঠিক অভ্যাস মেনে চললে এই ব্যথা কমানো সম্ভব। আসুন, জেনে নেই ঘাড়ের ব্যথার কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে।
ঘাড়ের ব্যথার কারণ
১. ভুল ভঙ্গিতে বসা বা শোয়া
দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসা, বিশেষ করে ডেস্কে কাজ করার সময় বা মোবাইল ব্যবহার করার সময় মাথা নিচু করে রাখা ঘাড়ের ব্যথার প্রধান কারণ। এছাড়া শোয়ার সময় সঠিক বালিশ বা ম্যাট্রেস ব্যবহার না করলেও ঘাড়ের পেশিতে টান পড়ে।
২. অতিরিক্ত মানসিক চাপ
চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণে ঘাড়ের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়, যা ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘদিনের মানসিক চাপের ফলে ঘাড়ের পেশি স্থায়ীভাবে শক্ত হয়ে যায়, যা ঘাড়ে ব্যথা বাড়িয়ে তোলে।
৩. আঘাত বা দুর্ঘটনা
যেমন হুইপল্যাশ ইনজুরি, যা হঠাৎ ঘাড়ের নড়াচড়ার কারণে ঘটে, এটি ঘাড়ের ব্যথার কারণ হতে পারে। গাড়ি দুর্ঘটনা বা খেলার সময় আঘাত লাগলে ঘাড়ের পেশি বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৪. ভারী ব্যাগ বহন করা
এক পাশে ভারী ব্যাগ বহন করা ঘাড়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা ঘাড়ে ব্যথা তৈরি করতে পারে। স্কুল ব্যাগ বা ল্যাপটপ ব্যাগ সবসময় দুই কাঁধে সমানভাবে বহন করা উচিত।
৫. স্লিপ ডিস্ক বা নার্ভের চাপ
স্লিপ ডিস্ক বা স্নায়ুর ওপর চাপ পড়লে ঘাড়ের ব্যথা তীব্র হতে পারে এবং হাত পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত ঝিঁঝি ধরা বা অসাড়তার অনুভূতির সাথে থাকে।
৬. বাত বা সংক্রমণ
বাতের সমস্যা থাকলে বা কোনো ভাইরাল সংক্রমণের কারণে ঘাড়ের ব্যথা হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ঠান্ডা লাগার পর ঘাড়ের পেশিতে ব্যথা অনুভূত হয়।
ঘাড়ের ব্যথার প্রতিকার
১. সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা
সোজা হয়ে বসা এবং ঘাড় সঠিক অবস্থানে রাখা ঘাড়ের ব্যথা প্রতিকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাজের সময় মনিটর চোখের সমান উচ্চতায় রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় খুব নিচু বা উঁচু বালিশ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলা উচিত।
২. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম
ঘাড়ের সহজ স্ট্রেচিং এবং ব্যায়াম করলে পেশি নমনীয় থাকে এবং ব্যথা কমে যায়। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট হালকা ঘাড়ের ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং পেশির শক্তি বাড়ে।
উদাহরণ:
- মাথা ধীরে ধীরে ডান ও বাম দিকে ঘোরানো।
- ঘাড় উপরে-নিচে নাড়ানো।
- কাঁধ উঁচু করা এবং ছেড়ে দেওয়া।
৩. গরম বা ঠান্ডা সেঁক
প্রয়োজন অনুযায়ী গরম সেঁক বা ঠান্ডা প্যাক ব্যবহার করলে ঘাড়ের ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে এটি কার্যকর হতে পারে। ব্যথা শুরু হওয়ার পর প্রথম ৪৮ ঘণ্টা ঠান্ডা সেঁক, এবং পরে গরম সেঁক কার্যকর।
৪. আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার
ঘুমানোর সময় সঠিক উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করলে ঘাড়ের ব্যথা প্রতিকার করা যায়। খুব উঁচু বা নিচু বালিশ ব্যবহার করলে ঘাড়ে টান পড়ে।
টিপস:
- মেমরি ফোম বা অরথোপেডিক বালিশ ব্যবহার করুন।
- পাশ ফিরে শোয়ার সময় মাথা সোজা রাখুন।
৫. ভারসাম্যপূর্ণ খাবার গ্রহণ
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে হাড় ও পেশি শক্ত থাকে, যা ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসাতে সহায়ক।
যেসব খাবার উপকারী:
দুধ, দই, চিজ
মাছ, ডিম
সবুজ শাকসবজি
বাদাম ও বীজ
ঘাড় ব্যথা হলে করণীয়
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
যখন ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয়, তখন বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ঘাড়ে বেশি চাপ পড়া থেকে বিরত থাকুন এবং হঠাৎ নড়াচড়া এড়িয়ে চলুন।
২. ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন
যদি ঘাড়ের ব্যথা থাকে, তাহলে ভারী কোনো জিনিস তোলা বা দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসা এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে মাথা নিচু করে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা উচিত নয়।
৩. সঠিক ভঙ্গিতে মোবাইল এবং কম্পিউটার ব্যবহার
মোবাইল চোখের সমান উচ্চতায় ধরে ব্যবহার করুন এবং কম্পিউটারের মনিটর এমনভাবে সেট করুন যেন ঘাড় সোজা থাকে।
টিপস বক্স:
- প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট হালকা ঘাড়ের ব্যায়াম করুন।
- দীর্ঘক্ষণ কাজের সময় বিরতি নিন এবং ঘাড় স্ট্রেচিং করুন।
- খুব বেশি সময় মোবাইল বা ল্যাপটপে ঝুঁকে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসা
যদি ঘাড়ের ব্যথা কয়েকদিনের মধ্যে না কমে বা ব্যথা তীব্র হয়, তাহলে এটি ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। যদিও আমরা এখানে ডাক্তারের পরামর্শ বাদ দিয়েছি, তবে ঘাড়ের সমস্যার জন্য সঠিক চিকিৎসা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা:
- হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং
- গরম বা ঠান্ডা সেঁক
- আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার
এই সহজ উপায়গুলো মেনে চললে ঘাড়ের ব্যথা অনেকটাই কমানো সম্ভব। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় ছোট ছোট পরিবর্তন এনে আপনি ঘাড়ের স্বস্তি ফিরে পেতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা ঘাড়ের ব্যথা প্রতিকারে সহায়।।
