বুকের ডান পাশে ব্যথা কেন হয়? বুকের ডান পাশে ব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে। এর পেছনে থাকতে পারে হজমের সমস্যা, গ্যাস, পাঁজরের চোট, ফুসফুসের সংক্রমণ বা যকৃতের অসুখ। একে হালকা ভাবা বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই ব্যথা কখনো গ্যাসের জন্যও হয়, আবার কখনো গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। যদি ব্যথা তীব্র হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বা অনেক দিন ধরে থাকে — তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ দরকার।
বুকের ডান পাশে ব্যথা মানেই কি হার্ট অ্যাটাক? না, সব সময় না। এই ব্যথা অনেক রোগের লক্ষণ হতে পারে। আমাদের পাঁজরের নিচে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থাকে। যেমন — ফুসফুস, যকৃত (লিভার), পিত্তথলি (গলব্লাডার), হজমের অঙ্গ।
তাই এই ধরণের ব্যথা মানে সব সময় কিছু সাধারণ সমস্যা নয়। অনেক সময় গুরুতর অসুখের লক্ষণও হতে পারে।
আপনার বুকের ডান পাশে ব্যথা, এছাড়াও বুকের ঠিক পাঁজরের নিচে ব্যথা অনুভব করছেন? এটা গ্যাস না কি লিভারের সমস্যা? ভয় পাবেন না—এই লেখায় আপনি পাবেন বিস্তারিত সমাধান। এই লেখায় আমরা জানব—
- বুকের ডান পাশে ব্যথা কেন হয়
- কখন চিন্তার কারণ
- কি করলে বুকের ডান পাশে ব্যথা কমে
- ডাক্তারের কাছে কখন যাবেন
এই লেখা পড়লে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন নিজের অবস্থা কতটা গুরুতর।
বুকের ডান পাশে ব্যথার লক্ষণ
ডান পাশে বুকের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তাই লক্ষণগুলো লক্ষ্য করা খুব জরুরি। নিচে কিছু সাধারণ ও গুরুতর লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন ব্যথার প্রকৃতি ও গুরুত্ব:
সাধারণ লক্ষণ (কম গুরুতর)
এইগুলো সাধারণত গ্যাস, হজমের সমস্যা বা পেশির টান থেকে হয়:
- ঢেঁকুর ওঠা বা পেট ফাঁপা
- খাওয়ার পর ব্যথা বেড়ে যাওয়া
- চাপ দিলে ব্যথা অনুভব হওয়া
- নড়াচড়ায় ব্যথা বাড়া
- হালকা ব্যথা, টান টান অনুভব
- বিশ্রামে ব্যথা কমে যাওয়া
গুরুতর লক্ষণ (চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে)
এই লক্ষণগুলো দেখলে সতর্ক হতে হবে এবং দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে:
- ব্যথা হঠাৎ তীব্র হয়ে ওঠা
- ডান কাঁধ বা পিঠে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা হাঁপিয়ে যাওয়া
- জ্বর, বমি বা বমি বমি ভাব
- চোখ বা ত্বক হলদেটে হওয়া (লিভারের সমস্যা)
- প্রস্রাবে জ্বালা বা গন্ধ
- পেট ফুলে থাকা বা পায়খানা বন্ধ থাকা
- ঘুমের মধ্যে ব্যথা উঠে যাওয়া
- ব্যথার সাথে ঠান্ডা ঘাম বা মাথা ঘোরা
বুকের ডান পাশে পাঁজরের নিচে ব্যথা কেন হয়? ব্যথার প্রধান কারণ
বুকের ডান পাশে, ঠিক পাঁজরের নিচে ব্যথা হলে অনেকেই ভয় পান। কেউ ভাবেন হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। কেউ ভাবেন গ্যাসের সমস্যা। আসলে এই ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ, কিছু জটিল।
চলুন একে একে বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।
১. গ্যাসের সমস্যা বা হজমের গোলমাল
এটাই সবচেয়ে সাধারণ কারণ। যখন পেটে গ্যাস জমে, তখন তা উপর দিকে চাপ দেয়।
ডান পাশে পাঁজরের নিচে ব্যথা তৈরি হয়।
লক্ষণ:
- ঢেঁকুর উঠে
- পেট ফেঁপে থাকে
- খাবার পর ব্যথা বাড়ে
- বুক ধড়ফড় করে
কেন হয়?
- বেশি ঝাল বা ভাজাপোড়া খেলে
- একসাথে বেশি খেলে
- রাতে দেরিতে খেলে
করণীয়:
- গরম পানি খান
- হালকা খাবার খান
- ধীরে ধীরে খেতে হবে
- প্রয়োজনে অ্যান্টাসিড নিতে পারেন
২. লিভারের সমস্যা
লিভার থাকে ডান পাশে, ঠিক পাঁজরের নিচে। তাই লিভারে কোনো সমস্যা হলে এখানেই ব্যথা লাগে। লিভারে চর্বি, প্রদাহ বা ইনফেকশন হলে ব্যথা হতে পারে।
সাধারণ কারণ:
- ফ্যাটি লিভার
- হেপাটাইটিস
- লিভারে ইনফেকশন
- অতিরিক্ত ওষুধ বা অ্যালকোহল
লক্ষণ:
- ডান পাশে ভারী লাগা
- খাবারে অরুচি
- চোখ বা ত্বক হলুদ
- ক্লান্তি
- জ্বর বা বমি
করণীয়:
- চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিন
- রক্ত পরীক্ষা করুন (LFT)
- ডাক্তারের পরামর্শ নিন
৩. পিত্তথলির পাথর (Gallbladder Stone)
পিত্তথলি লিভারের পাশে থাকে। এতে পাথর হলে হঠাৎ ব্যথা শুরু হয়। তেল-ঝাল খাওয়ার পর বেশি হয়।
কেমন ব্যথা হয়?
- হঠাৎ তীব্র ব্যথা
- ব্যথা কাঁধে ছড়ায়
- খাওয়ার পর বেড়ে যায়
- বমি বমি ভাব
কেন হয়?
- বেশি চর্বি খাওয়া
- ওজন বেশি
- দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকা
করণীয়:
- আলট্রাসনোগ্রাম করুন
- তেল-চর্বি কম খান
- পাথর বড় হলে অপারেশন প্রয়োজন
৪. পাঁজরের পেশির টান বা আঘাত
অনেক সময় ভারী কাজ করলে বা হঠাৎ মোচড় খেলে পাঁজরের নিচে ব্যথা হয়। ব্যথাটা পেশি থেকে আসে।
লক্ষণ:
- নড়াচড়ায় ব্যথা বাড়ে
- গভীর শ্বাসে ব্যথা লাগে
- আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ব্যথা
করণীয়:
- গরম সেঁক দিন
- বেশি নড়াচড়া থেকে বিরত থাকুন
- ব্যথা কমানোর ওষুধ খেতে পারেন
৫. ফুসফুসের সমস্যা
ডান পাশে ফুসফুসে ইনফেকশন বা পানি জমলে পাঁজরের নিচে ব্যথা লাগে।
সাধারণ সমস্যা:
- নিউমোনিয়া
- প্লুরাল এফিউশন (ফুসফুসে পানি)
লক্ষণ:
- কাশি
- জ্বর
- শ্বাস নিতে কষ্ট
- হালকা ব্যায়ামে হাঁপিয়ে যাওয়া
করণীয়:
- এক্স-রে করুন
- ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক
- শ্বাসকষ্ট হলে জরুরি চিকিৎসা নিন
৬. কিডনির সমস্যা
ডান কিডনিতে পাথর বা ইনফেকশন হলে কোমর ও পাঁজরের নিচে ব্যথা হয়।
লক্ষণ:
- প্রস্রাবে জ্বালা
- প্রস্রাব লাল বা গন্ধযুক্ত
- জ্বর
- কোমরে টানটান ব্যথা
করণীয়:
- প্রচুর পানি পান করুন
- আলট্রাসনোগ্রাম বা ইউরিন টেস্ট করুন
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
৭. কোষ্ঠকাঠিন্য
বিরক্তিকর হলেও সত্যি—কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও পাঁজরের নিচে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে যদি পায়খানা না হয় কয়েকদিন।
লক্ষণ:
- পেট শক্ত লাগে
- মল ত্যাগে কষ্ট
- পেট ফুলে থাকে
করণীয়:
- আঁশযুক্ত খাবার খান
- পানি বেশি খান
- হালকা ব্যায়াম করুন
বুকের ডান পাশে ব্যথা হলে করণীয়
বুকের ডান পাশে ব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে। তাই আগে লক্ষণ দেখে বুঝে নিতে হবে আসল কারণ। নিচে ধাপে ধাপে করণীয় দেওয়া হলো:
ব্যথা হালকা হলে:
- গরম পানি খান
- বিশ্রাম নিন
- হালকা হাঁটাহাঁটি করুন
- ঝাল, তেল, ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন
- গ্যাসের সমস্যা মনে হলে অ্যান্টাসিড নিতে পারেন
ব্যথা যদি পাঁজরের পেশি বা টানে হয়:
- গরম সেঁক দিন
- যন্ত্রণানাশক (ব্যথার ওষুধ) নিতে পারেন
- ভারী কাজ বা ব্যায়াম বন্ধ রাখুন
ব্যথার সাথে নিচের কোনটি হলে সতর্ক হোন:
- জ্বর
- কাশি
- শ্বাসকষ্ট
- প্রস্রাবে জ্বালা বা রঙ পরিবর্তন
- পেটে ফোলা বা বমি ভাব
➡️ এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বুকের ডান পাশে ব্যথা হলে ১০ টি ঘরোয়া চিকিৎসা
১. আদা: যদি আপনি বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা খুঁজছেন, তাহলে আদা হতে পারে একটি সহজ সমাধান। আদার মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যা বুকের ডান পাশের পেশী অথবা পাঁজরের ব্যথায় আরাম দিতে পারে। এই বুকের ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে আপনি আদা চা পান করতে পারেন অথবা সামান্য আদা কুচি করে লবণ মিশিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। দিনে ২-৩ বার এটি করতে পারেন, যা বুকের ব্যথার অস্বস্তি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
২. হলুদ: হলুদে কারকিউমিন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগ বিদ্যমান। বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে এক গ্লাস গরম দুধে সামান্য হলুদ মিশিয়ে পান করলে আপনি আরাম পেতে পারেন। এর পাশাপাশি, সামান্য হলুদ বাটা গরম করে সরাসরি ব্যথার স্থানে লাগালেও উপকার পাওয়া যায়। এটি বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসায় একটি সহজলভ্য এবং কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
৩. গরম বা ঠান্ডা সেঁক: বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে গরম বা ঠান্ডা সেঁক বেশ কার্যকর হতে পারে। তবে, কোন পরিস্থিতিতে কোনটি ব্যবহার করবেন, তা ব্যথার কারণের উপর নির্ভর করে। যদি আপনার বুকের ব্যথা পেশী টান বা কোনো আঘাতের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে গরম সেঁক সেই পেশীগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে এবং আরাম দিতে পারে।
অন্যদিকে, যদি বুকের ব্যথার সাথে প্রদাহ বা ফোলাভাব থাকে, তবে ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার করলে আপনি আরাম পেতে পারেন। দিনে কয়েকবার, প্রায় ১৫-২০ মিনিটের জন্য সেঁক দিন। এটি বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসায় একটি সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়।
৪. তুলসী: তুলসীর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ব্যথানাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বুকের ডান পাশের হালকা ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই ঘরোয়া চিকিৎসার জন্য, আপনি কয়েকটি তুলসী পাতা সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও, তুলসী পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে তুলসী চা তৈরি করে পান করলেও উপকার পাওয়া যায়। এটি বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে বেশ পরিচিত এবং সহজলভ্য।
৫. রসুন: রসুনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন। এছাড়াও, বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে রসুনের তেল হালকা গরম করে ব্যথার জায়গায় মালিশ করা যেতে পারে। এটি সেখানকার অস্বস্তি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
৬. মেথি: মেথির অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য পেশী এবং হাড়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে, এক চা চামচ মেথি বীজ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে সেই পানি পান করুন। এছাড়াও, আপনি মেথি বীজ হালকা গরম করে ব্যথার জায়গায় সেঁক দিতে পারেন। এটি বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং আরাম দিতে পারে।
৭. লবণ গরম করে সেঁক: বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে লবণ গরম করে সেঁক একটি সহজ উপায় হতে পারে। মোটা কাপড়ে কিছুটা লবণ নিয়ে গরম করুন এবং যেখানে ব্যথা অনুভব করছেন, সেখানে সাবধানে সেঁক দিন। গরম সেঁক পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে, যা বুকের ডান পাশে ব্যথার উপশম দিতে পারে। তবে খেয়াল রাখবেন লবণ যেন খুব বেশি গরম না হয়, যাতে ত্বক পুড়ে না যায়।
৮. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়া বুকের পেশীগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করে, যা বুকের ব্যথার অনুভূতি কমাতে পারে। সবচেয়ে ভালো ফল পেতে, আরামদায়কভাবে বসে বা শুয়ে কয়েক মিনিটের জন্য ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। এটি বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে তাৎক্ষণিক আরাম দিতে পারে।
৯. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: অনেক সময় অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ভুল অঙ্গবিন্যাসের কারণে বুকেব্যথা অনুভব হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ধরনের ব্যথা কমাতে ভারী কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং এমন আরামদায়ক অবস্থানে ঘুমানোর চেষ্টা করুন যাতে বুকের ডান পাশের পেশীগুলোর উপর চাপ কম পড়ে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম বুকের ডান পাশে ব্যথার উপশমে সহায়ক হতে পারে।
১০. হাইড্রেটেড থাকা: বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। ভাবছেন, জলের সাথে ব্যথার কী সম্পর্ক? আসলে, যখন আমাদের শরীর যথেষ্ট পরিমাণে জল পায়, তখন শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল থাকে এবং পেশীগুলো টানমুক্ত হয়। অনেক সময়, আমরা বুঝতেও পারি না, শরীরে জলের অভাব বা ডিহাইড্রেশন পেশী ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাই, যদি আপনি বুকের ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা খুঁজছেন, তাহলে আজ থেকেই পর্যাপ্ত জল পান করা শুরু করুন। এটি হয়তো সরাসরি ব্যথা কমাবে না, তবে আপনার শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে এবং পেশীর অস্বস্তি কমাতে নিশ্চিতভাবে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, বুকের ডান পাশে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা কেবল বাহ্যিক নয়, শরীরের ভেতরের যত্ন নেওয়াও জরুরি।
এছাড়াও আরও কিছু ঘরোয়া উপায়
- দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খান
- হালকা খাবার খান (ভাত, সবজি, ডাল)
- আদা-লেবুর চা খেতে পারেন
- পেট খালি রাখবেন না
- হালকা হাঁটাহাঁটি করুন
- রাতে দেরি করে খাওয়া বন্ধ করুন
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
- ব্যথা হঠাৎ তীব্র হয়ে যায়
- ব্যথার সাথে জ্বর, বমি, শ্বাসকষ্ট হয়
- ব্যথা ৩ দিনের বেশি থাকে
- ব্যথা ঘন ঘন ফিরে আসে
- ঘুম ভেঙে যায় ব্যথায়
- ওষুধে কাজ না হয়
- ব্যথার সাথে অন্য উপসর্গ দেখা দেয়
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
- বুকের ডান পাশে ব্যথাকে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
- তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব, মাথা ঘোরা বা অন্য কোনো গুরুতর উপসর্গ থাকলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- এই ঘরোয়া চিকিৎসাগুলো শুধুমাত্র হালকা অস্বস্তির জন্য এবং ডাক্তারের পরামর্শের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
- যদি ঘরোয়া চিকিৎসা গ্রহণের পরেও ব্যথা না কমে বা বৃদ্ধি পায়, তবে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
মনে রাখবেন, সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অপরিহার্য।
ডান পাশের বুকের ব্যথার চিকিৎসা না করার সম্ভাব্য জটিলতা
ডান পাশের বুকের ব্যথা অনেক সময় সাধারণ কোনো কারণে হতে পারে, যেমন পেশীর টান বা গ্যাস। কিন্তু এটি অবহেলা করলে ভয়াবহ জটিলতা দেখা দিতে পারে। নিচে ডান পাশের বুকের ব্যথার চিকিৎসা না করলে যেসব সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে, তা সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করছি।
১. ফুসফুসে সংক্রমণ (Pneumonia বা Pleural Effusion)
ডান ফুসফুসে যদি ইনফেকশন হয়, তাহলে ব্যথা, কাশি, জ্বর দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না করলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং প্লুরা বা ফুসফুসের চারপাশে পানি জমে যেতে পারে (pleural effusion)। এতে শ্বাসকষ্ট মারাত্মক হয়ে যায়।
জটিলতা:
- শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
- রক্তে সংক্রমণ (সেপ্টিসেমিয়া)
- ICU পর্যন্ত অবস্থা যেতে পারে
২. গলব্লাডারের পাথর (Gallstones)
গলব্লাডারে পাথর হলে সাধারণত ডান পাশের পাঁজরের নিচে ব্যথা হয়, বিশেষ করে খাবারের পরে। উপেক্ষা করলে এটি গলব্লাডার ইনফেকশন বা ইনফ্লেমেশন (Cholecystitis) হতে পারে।
জটিলতা:
- গলব্লাডার ফেটে যাওয়া
- পাকস্থলীর কাছে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া
- জরুরি অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে
৩. হৃদযন্ত্রের সমস্যা
ডান পাশের ব্যথা সবসময় হৃদযন্ত্র থেকে হয় না, কিন্তু কিছু কেসে এটা হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচলের সমস্যা নির্দেশ করে। একে বলে “Angina” বা “Silent Heart Attack”।
জটিলতা:
- হৃদরোগ বেড়ে যাওয়া
- হার্ট অ্যাটাক
- হঠাৎ মৃত্যুও হতে পারে
৪. ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধা (Pulmonary Embolism)
ডান ফুসফুসে রক্ত জমে গেলে তীব্র ব্যথা হয়, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। দ্রুত চিকিৎসা না করলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
জটিলতা:
- ফুসফুস অকেজো হয়ে যাওয়া
- হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু
৫. পাঁজরের হাড় ফ্র্যাকচার
হঠাৎ আঘাত পেলে পাঁজরের হাড় ভেঙে যেতে পারে। এ ব্যথাকে যদি উপেক্ষা করেন, তাহলে ফুসফুসে খোঁচা লাগার আশঙ্কা থাকে।
জটিলতা:
- ফুসফুসে কাটা পড়ে বাতাস বের হয়ে যাওয়া (Pneumothorax)
- শ্বাসকষ্ট ও হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া
৬. যকৃত (লিভার) সমস্যা
যকৃতে ফ্যাট জমে যাওয়া বা ইনফ্লেমেশন হলে ডান পাশের বুকের নিচে ব্যথা হয়। অনেকে এটাকে সাধারণ গ্যাস্ট্রিক ভেবে এড়িয়ে যান।
জটিলতা:
- সিরোসিস
- লিভার ফেলিওর
- লিভার ক্যান্সার পর্যন্ত গড়াতে পারে
৭. অগ্ন্যাশয়ে সমস্যা (Pancreatitis)
যদিও সাধারণত পেটের মাঝ বরাবর ব্যথা হয়, তবে অনেক সময় ডান পাশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মারাত্মক ও জীবনহানিকর হতে পারে।
জটিলতা:
- ইনফেকশন
- রক্তে টক্সিন ছড়িয়ে পড়া
- কিডনি ও ফুসফুসে ক্ষতি
বুকের ডান পাশে ব্যথা কি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ?
হ্যাঁ, অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক বুকের ডান পাশে ব্যথা দিতে পারে, কিন্তু তা কমন না।
হার্ট অ্যাটাক হলে—
- বুক টনটন করে
- ডান বা বাম কাঁধে ব্যথা ছড়ায়
- ঠান্ডা ঘাম হয়
- মাথা ঝিমঝিম করে
বুকের বাম পাশে পাঁজরের নিচে ব্যথা: কারণ, লক্ষণ ও করণীয়
বুকের বাম পাশে পাঁজরের নিচে ব্যথা হলে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। অনেকে ভাবেন এটা হৃদযন্ত্রের সমস্যা। আসলে সব সময় তা নয়। এই ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে।
চলুন সহজ করে জেনে নিই এর আসল কারণ, লক্ষণ ও করণীয়।
১. গ্যাস বা হজমের সমস্যা
বাম দিকেও গ্যাস চাপ দিতে পারে। বিশেষ করে যখন পেট ফাঁপা থাকে।
লক্ষণ:
- পেট ফাঁপা
- ঢেঁকুর উঠা
- খাবারের পর ব্যথা বাড়ে
- বুক জ্বালাপোড়া
করণীয়:
- গরম পানি পান করুন
- ধীরে খেয়ে হালকা খাবার খান
- বেশি মসলা, ঝাল, তেল বাদ দিন
- প্রয়োজন হলে অ্যান্টাসিড নিন
২. পাকস্থলীর সমস্যা (গ্যাস্ট্রিক/আলসার)
বাম পাশে পাঁজরের নিচে পাকস্থলী থাকে। গ্যাস্ট্রিক হলে এখানে ব্যথা লাগে।
লক্ষণ:
- খালি পেটে ব্যথা
- ক্ষুধা পায় না
- খাবারে অরুচি
- বমি বমি ভাব
করণীয়:
- নিয়মিত খাবার খান
- চা, কফি, কোমল পানীয় কমান
- বেশি খালি পেটে থাকা যাবে না
- ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ নিন
৩. হৃদপিণ্ডের সমস্যা
যদিও হৃদপিণ্ড মাঝ বরাবর থাকে, তার একাংশ বাম দিকে। হার্টের সমস্যা হলে ব্যথা এখানে অনুভূত হতে পারে।
লক্ষণ:
- বুক চেপে ধরা ব্যথা
- বাম হাত বা গলায় ছড়িয়ে পড়ে
- শ্বাস নিতে কষ্ট হয়
- ঘেমে যাওয়া
করণীয়:
- অবিলম্বে হাসপাতালে যান
- ইসিজি/ট্রোপোনিন পরীক্ষা করুন
- সময় নষ্ট করবেন না
৪. পাঁজরের পেশিতে টান বা চোট
পাশ ঘুরাতে গিয়ে, ভারী কিছু তুলতে গিয়ে পাঁজরের পেশিতে টান লাগতে পারে।
লক্ষণ:
- চাপ দিলে ব্যথা
- নড়াচড়ায় ব্যথা বাড়ে
- বিশ্রামে ব্যথা কমে
করণীয়:
- গরম সেঁক দিন
- বিশ্রাম নিন
- ব্যথানাশক ওষুধ প্রয়োজনে
৫. প্লীহার (spleen) সমস্যা
প্লীহা থাকে বাম পাশে। ইনফেকশন বা আঘাতে এটি বড় হয়ে গেলে ব্যথা হতে পারে।
লক্ষণ:
- বাম পাশে চাপ অনুভব
- জ্বর
- ক্লান্তি
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
করণীয়:
- রক্ত পরীক্ষা করুন
- ডাক্তার দেখান
- প্লীহা ফেটে গেলে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন
বুকের বাম পাশে ব্যথা হলে কী করবেন?
হালকা ব্যথা হলে:
- পানি খান
- বিশ্রাম নিন
- হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খান
- গ্যাসের ওষুধ খেতে পারেন
ব্যথার সাথে নিচের কোনো উপসর্গ থাকলে সতর্ক হোন:
- জ্বর
- বমি
- শ্বাসকষ্ট
- বাম হাতে ব্যথা ছড়ানো
- পেট ফোলা
➡️ তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কখন হাসপাতালে যাবেন?
- ব্যথা তীব্র ও হঠাৎ হয়
- ব্যথা ঘন ঘন ফিরে আসে
- ঘুম থেকে উঠে ব্যথা লাগে
- ব্যথার সাথে শ্বাসকষ্ট হয়
- ঘাম বা দুর্বলতা লাগে
শেষ কথা
বুকের ডান পাশে পাঁজরের নিচে ব্যথা সাধারণ কারণেও হতে পারে। কিন্তু যদি ব্যথা বাড়তে থাকে, তাহলে একদম দেরি করবেন না। আপনি নিজের শরীরকে সবচেয়ে ভালো চেনেন। তাই মনোযোগ দিন, যত্ন নিন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
বুকের ডান পাশে ব্যথা সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
ধূমপান করলে কি বুকের ডান পাশে ব্যথা হয়?
হ্যাঁ, ধূমপান ফুসফুসের ক্ষতি করে। এতে বুকে ব্যথা, বিশেষ করে ডান পাশেও ব্যথা হতে পারে। দীর্ঘদিন ধূমপান করলে ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসে প্রদাহ বা ক্যান্সারও হতে পারে।
জোরে শ্বাস নিলে বুকে ব্যথা হয় কেন?
জোরে শ্বাস নিলে ব্যথা হলে এটা পাঁজরের পেশি টান, ফুসফুসে ইনফেকশন (প্লুরিসি), বা হালকা ইনজুরির কারণে হতে পারে। বারবার হলে ডাক্তারের পরামর্শ দরকার।
বুকের বাম পাশে চিন চিন ব্যথার কারণ কী হতে পারে?
এটা গ্যাস্ট্রিক, দুশ্চিন্তা, হালকা পেশির টান বা হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যদি ব্যথা হাত বা গলায় ছড়িয়ে পড়ে, শ্বাস কষ্ট হয়, তাহলে এটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।
মানসিক চাপের কারণে কি বুকের ডান পাশে ব্যথা হতে পারে?
হ্যাঁ, মানসিক চাপ বা উদ্বেগে পেশি টান পড়ে, যা বুকের ডান পাশেও ব্যথা দিতে পারে। অনেক সময় এটা দমবন্ধ ভাবও তৈরি করে।
বুকের কোন জায়গায় ব্যথা হলে সেটা গুরুতর ধরা হয়?
যদি বুকের মাঝখানে বা বাম পাশে ব্যথা হয়, ব্যথা গলা বা বাম হাতে ছড়ায়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, ঠান্ডা ঘাম হয়—তাহলে সেটা গুরুতর। দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

BSES+Advance Nutritionist