ব্যাথা নিরাময়ে বিশস্ত সঙ্গি

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা? জানুন কারণ ও ১০টি ঘরোয়া উপায়ে প্রতিকার

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা কমানোর উপায় জানা আমাদের প্রত্যেকের জন্য খুবই জরুরি। এই অস্বস্তিকর ব্যথা, বিশেষ করে যদি দুই হাতের মাংসপেশীতে ব্যথা হয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তোলে। আঘাত, অতিরিক্ত ব্যবহার বা আর্থ্রাইটিসের মতো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় এর কারণ হতে পারে।

হাতের মাংসপেশির ব্যথা উপশমে প্রথমেই প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম। আক্রান্ত স্থানে নিয়মিত বরফ কিংবা গরম পানির সেঁক ব্যবহার করলে ব্যথা ও প্রদাহ কমতে সাহায্য করে। হালকা স্ট্রেচিং ব্যায়াম ও সঞ্চালন-উপযোগী স্ট্রেস রিলিফ অয়েল ম্যাসাজ রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে পেশির শক্তি ফেরাতে কার্যকর। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ অথবা মাংসপেশি শিথিলকারী ঔষধ সেবন করা যেতে পারে।

আপনার যদি বাম বা ডান হাতের কব্জিতে ব্যথা থাকে বা মাংসপেশিতে টান অনুভব করেন, কীভাবে দ্রুত সুস্থ হবেন, তা আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবেন। একটি সুস্থ হাতের জন্য সব কার্যকর সমাধান পেতে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

Table of Contents

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা কেন হয়?

হাতের মাংস পেশিতে ব্যথা

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা একটি খুব সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। হাতের পেশিতে ব্যথার প্রধান কারণগুলো হলো অতিরিক্ত ব্যবহার, আঘাত, টেনডনের প্রদাহ, কার্পাল টানেল সিনড্রোম এবং আর্থ্রাইটিস। নিচে এক নজরে বিস্তারিত দেখে নিন।

  • অতিরিক্ত ব্যবহার ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাজঃ টাইপিং, রান্না, কাপড় নিংড়ানোর মতো একই ধরনের কাজ বারবার করলে মাংসপেশিতে চাপ পড়ে, যা ব্যথার কারণ হয়।
  • আঘাত ও দুর্ঘটনাঃ পড়ে যাওয়া বা সরাসরি আঘাতের কারণে মাংসপেশিতে ক্ষতি হলে ব্যথা হয়।
  • টেনডনের প্রদাহঃ টেনডনগুলোতে প্রদাহ হলে ব্যথা হয়, বিশেষত ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস হলে বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ায় ব্যথা হয়।
  • কার্পাল টানেল সিনড্রোমঃ কব্জির স্নায়ু সংকুচিত হলে হাতে ব্যথা, অবশ ভাব বা ঝিনঝিন করা অনুভব হতে পারে।
  • আর্থ্রাইটিসঃ জয়েন্টের প্রদাহ, যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হাতে ব্যথা, ফোলা বা শক্ত করে তোলে।
  • মানসিক চাপঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ মাংসপেশিতে টান সৃষ্টি করে ব্যথা ঘটাতে পারে।
  • পানিশূন্যতা ও পুষ্টির অভাবঃ শরীরে পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প বা ব্যথার কারণ হয়।

তথ্যসূত্রঃ Mayo Clinic, WebMD, American Society for Surgery of the Hand (ASSH), Physio Tattva

হাতের মাংসপেশির ব্যথার লক্ষণ

ব্যথা ছাড়াও অন্য কিছু উপসর্গ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার পেশি সমস্যাগ্রস্ত:

  • টানমতো অনুভব
  • ব্যথার সঙ্গে ফোলা
  • ঝিনঝিন বা অবশ ভাব
  • হাতের নির্দিষ্ট জায়গায় চাপ দিলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া
  • নড়াচড়ায় সীমাবদ্ধতা

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা কমানোর ১০টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায়

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না। আর্থ্রাইটিস, কার্পাল টানেল সিনড্রোম, অতিরিক্ত ব্যবহার বা আঘাতের কারণে হতে পারে।  হাতের বাতের ব্যথা কমানোর জন্য বিশ্রাম, বরফ-গরম সেঁক, ব্যথানাশক ওষুধ, হালকা ব্যায়াম এবং ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকর। হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত পড়ুন। 

১. হ্যান্ড স্ট্রেচিংঃ আঙুলের নমনীয়তা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত স্ট্রেচিং করুন।

২. টপিক্যাল জেলঃ ডাইক্লোফেনাক (ভলটারেন) জেল সরাসরি ব্যবহারে ব্যথা কমায়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম হয়।

৩. গরম-ঠান্ডা সেঁকঃ গরম সেঁক পেশিকে শিথিল করে, আর ঠান্ডা সেঁক ফোলা কমাতে সাহায্য করে।

৪. হাতের ব্যায়ামঃ মুঠি করা ও আঙুল প্রসারিত করার মতো ব্যায়াম পেশি সচল রাখে।

৫. ম্যাসাজ থেরাপিঃ হাতের তালু ও পিঠে মৃদু বৃত্তাকার ম্যাসাজ ব্যথা কমাতে সহায়ক।

৬. স্প্লিন্ট ব্যবহারঃ আর্থ্রাইটিসের প্রদাহ কমাতে কিছু সপ্তাহের জন্য স্প্লিন্ট ব্যবহার করা যায়।

৭. বিশ্রাম নেওয়াঃ পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ থেকে পর্যাপ্ত বিরতি নেওয়া পেশির জন্য খুব জরুরি।

৮.ব্যথানাশক তেল ব্যবহার বা ম্যালিশ : নারকেল, সরিষা বা ব্যথানাশক তেল ব্যবহার করে হালকা চাপে মালিশ করুন। তাখফি বা অনুরূপ তেল ব্যবহার করলে পেশি দ্রুত শিথিল হয়। এটি প্রাকৃতিক উপায়।

৯. NSAIDs ঔষধঃ আইবুপ্রোফেন (অ্যাডভিল, মট্রিন) এর মতো ঔষধগুলো প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

১০. ফিজিওথেরাপিঃ প্রয়োজনে পেশাদার হাত থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রাকৃতিক ব্যথানাশক তাখফি স্ট্রেস রিলিফ অয়েল ব্যবহারে হাতের মাংসপেশির ব্যথা উপশম

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা উপশমের জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক তেল অত্যন্ত কার্যকর। তাখফি স্ট্রেস রিলিফ অয়েল, যা সাধারণত “ব্যথানাশক তেল” বা “মালিশ তেল” নামে পরিচিত, তা ব্যবহার করলে পেশীগুলো শিথিল হয় এবং ব্যথা দ্রুত কমতে শুরু করে।

এই তেল শুধুমাত্র হাতেই নয়, বরং নানা ধরনের ব্যথার জন্য উপকারী, যেমন:

  • হাতের মাংসপেশির টান
  • ঘাড় ও কাঁধের ব্যথা
  • কোমরের ব্যথা
  • বাতজনিত জয়েন্ট ব্যথা
  • পা মচকে গেলে বা টান ধরলে

তেলটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি, তাই এটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী আরাম দেয়।

✅ তাখফি স্ট্রেস রিলিফ অয়েল ব্যবহারের উপায়:

তাখফি স্ট্রেস রিলিফ অয়েলের ম্যাসাজ
  • ব্যথার স্থানে পরিষ্কার হাতে হালকা গরম তেল লাগান
  • ৫-১০ মিনিট ধরে বৃত্তাকারভাবে মালিশ করুন
  • প্রতিদিন ২-৩ বার ব্যবহার করলে দ্রুত ফল মিলবে
  • এটি ঘরে বসেই একদম সহজ ও নিরাপদ মাঝে ব্যথা উপশমের একটি কার্যকর উপায়।

তথ্যসূত্রঃ হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং, অস্টিন রিজিওনাল ক্লিনিক, ওয়েবএমডি, মেয়ো ক্লিনিক স্পোর্টস মেডিসিন।

কোন রোগের কারণে হাত ব্যথা হয়?

আমাদের হাতে ২৭টি হাড় এবং জটিল পেশী-স্নায়ু রয়েছে, তাই এর যেকোনো অংশে সমস্যা হলেই ব্যথা অনুভব করা স্বাভাবিক। হাতের ব্যথার প্রধান কারণগুলো হলো আর্থ্রাইটিস, কার্পাল টানেল সিনড্রোম, টেন্ডোনাইটিস, আঘাত এবং বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যা। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

  • আর্থ্রাইটিসঃ অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হাতের ব্যথার প্রধান কারণ, যা জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
  • কার্পাল টানেল সিনড্রোমঃ মিডিয়ান স্নায়ুর চাপে হাতে ঝিনঝিন করা ও ব্যথা হয়।
  • ডি কোয়ার্ভেইনস টেনোসাইনোভাইটিসঃ বুড়ো আঙুলের পাশের টেন্ডনে প্রদাহের কারণে ব্যথা হয়।
  • ট্রিগার ফিঙ্গারঃ আঙুল বাঁকা হয়ে আটকে যায়, যা নড়াচড়া করতে কষ্ট দেয়।
  • গাউটঃ ইউরিক অ্যাসিড জমে হাতে তীব্র ব্যথা ও ফোলাভাব সৃষ্টি করে।
  • টেনিস এলবোঃ কনুইয়ের প্রদাহজনিত ব্যথা, যা পেশীর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হয়।

তথ্যসূত্রঃ Mayo Clinic, Healthline, WebMD, থেকে সংগৃহীত।

কোন ভিটামিনের অভাবে হাতের মাংস পেশিতে ব্যথা হয়?

হাতের মাংস পেশিতে ব্যথা

হাতের পেশিতে ব্যথা হওয়া, অনেক সময় আমরা এর কারণ খুঁজে পাই না, কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিনের অভাবেও এই ধরনের ব্যথা হতে পারে। কোন ভিটামিনের অভাবে হাতের পেশিতে ব্যথা হয় আসুন বিস্তারিত জেনে নিই। 

  • ভিটামিন ডিঃ এই ভিটামিনের অভাবে পেশিতে দুর্বলতা, ব্যথা এবং এমনকি পেশিতে খিঁচুনিও দেখা দিতে পারে। ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুব জরুরি, আর এর অভাব হলে পেশীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • ভিটামিন বি১২ঃ ভিটামিন বি১২ এর অভাবে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। এর ফলে হাতের পেশিতে দুর্বলতা এবং ব্যথা অনুভব হয়। অনেক সময় হাত-পা ঝিনঝিন করার মতো অনুভূতিও হতে পারে, যা খুবই অস্বস্তিকর।
  • ভিটামিন বি১ থায়ামিনঃ থায়ামিনের অভাবে পেশিতে তীব্র ব্যথা বা মায়ালজিয়া হতে পারে। এই ভিটামিন আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অত্যাবশ্যক।
  • ভিটামিন বি৬ঃ ভিটামিন বি৬ এর অভাবে হাত-পায়ে ঝিনঝিন করা এবং পেশির নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ

  1. PMC (PubMed Central) – আন্তর্জাতিক মেডিকেল গবেষণা
  2. Healthline – আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ওয়েবসাইট
  3. The House Clinics – মেডিকেল ক্লিনিক
  4. Genetic Nutrition – পুষ্টি বিষয়ক ওয়েবসাইট

হাতের পেশির ক্ষতি হলে কিভাবে দেখব?

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা

পেশির ক্ষতি বা ইনজুরি আমাদের জীবনে প্রায়ই ঘটে থাকে। পেশির ক্ষতির প্রধান লক্ষণগুলো হলো তীব্র ব্যথা, ফোলা, পেশী দুর্বলতা, চলাচলে বাধা এবং দৃশ্যমান রক্তপাত বা ফোলা অংশে নীলচে দাগ। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত দেখে নেওয়া যাক।

  • তীব্র ও আকস্মিক ব্যথাঃ পেশি যখন ছিঁড়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন আক্রান্ত স্থানে খুব তীক্ষ্ণ ব্যথা হয়। নড়াচড়া করতে গেলে বা ছুঁলে ব্যথা আরও বেড়ে যায়। আমি জানি, এই ব্যথা কতটা কষ্টকর হতে পারে।
  • ফোলা ও রক্তপাতঃ ক্ষতিগ্রস্ত পেশিতে রক্তনালী ছিঁড়ে যেতে পারে, যার ফলে ওই স্থানে ফোলা ভাব দেখা যায়। অনেক সময় ত্বকের নিচে নীল-কালো দাগও দেখা দিতে পারে, যা ভেতরের রক্তক্ষরণের চিহ্ন।
  • গতিসীমাবদ্ধতাঃ ইনজুরির কারণে আক্রান্ত পেশি শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে হাত-পা নাড়ানো বা কোনো কিছুতে জোরে চাপ দিতে কষ্ট হয়। আমার মনে হয়, এই সীমাবদ্ধতাগুলো খুবই হতাশাজনক।
  • পেশী সংকোচন বা খিঁচুনিঃ ক্ষতিগ্রস্ত পেশিগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে পারে, যা ব্যথা ও অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলে। 
  • পিং সেনসেশন বা শব্দঃ গুরুতর ক্ষেত্রে, যেমন পেশি পুরোপুরি ছিঁড়ে গেলে, অনেক সময় পপ করার মতো শব্দ শোনা যেতে পারে বা এমন একটি টান লাগার অনুভূতি হতে পারে। এটা আসলে পেশি ছিঁড়ে যাওয়ার একটি লক্ষণ।

তথ্যসূত্র লিংকঃ WebMD, Healthline, Medicover Hospitals, Princeton Orthopaedic, Apollo Hospitals.

হাতের কনুই ব্যথার কারণ কি?

হাতের কনুই ব্যথার কারণে হাত দিয়ে কোনো কিছু তোলা, মোচড়ানো বা এমনকি সাধারণ নড়াচড়াও কষ্টকর হয়ে ওঠে। কনুই ব্যথার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে টেনিস এলবো, গলফার্স এলবো, কিউবিটাল টানেল সিনড্রোম, বারসাইটিস, আর্থ্রাইটিস এবং পুনরাবৃত্তিমূলক চাপ উল্লেখযোগ্য। আসুন কারণ গুলো আরো বিস্তারিত জেনে নেই। 

  • টেনিস এলবো – (ল্যাটেরাল এপিকন্ডাইলাইটিস) -ঃ এটি হাতের পেছনের পেশির টেন্ডনে প্রদাহের কারণে হয়। র্যাকেট ব্যবহারকারী খেলোয়াড় বা যারা বারবার হাত মোচড়ানোর কাজ করেন, তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
  • গলফার্স এলবো (মিডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিস) -ঃ কনুইয়ের ভেতরের দিকের টেন্ডনে প্রদাহ হলে এটি হয়। গলফ খেলোয়াড় বা ভারী সরঞ্জাম যারা তোলেন, তাদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
  • কিউবিটাল টানেল সিনড্রোমঃ  কনুইয়ের ভেতরের দিকে থাকা আলনার স্নায়ুতে চাপ পড়লে ব্যথা, অসাড়তা এবং হাত দুর্বল হয়ে যায়।
  • ওলেক্র্যানন বারসাইটিসঃ কনুইয়ের পেছনের তরল-ভরা থলি (বারসা) ফুলে গেলে ব্যথা ও লালভাব দেখা দেয়। দীর্ঘক্ষণ কনুইতে চাপ দেওয়া বা আঘাতের কারণে এটি হয়।
  • আর্থ্রাইটিসঃ রিউমাটয়েড বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস এর কারণে হাড়ের কার্টিলেজ ক্ষয় হলে কনুই জয়েন্টে ব্যথা ও শক্ত হয়ে যায়।
  • ফ্র্যাকচার বা আঘাতঃ কনুইয়ে সরাসরি আঘাত লাগলে বা হাড় ভাঙলে তীব্র ব্যথা হয়, যা দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।
  • পুনরাবৃত্তিমূলক চাপঃ দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহার বা ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করলে পেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।

বাম হাতের মাংসপেশীতে ব্যথা হলে করণীয় ও প্রতিকার

বাম হাতের পেশিতে ব্যথার প্রধান কারণ হলো পেশির টান, অতিরিক্ত ব্যবহার বা আঘাত। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে বিশ্রাম, বরফ সেঁক, ব্যথানাশক ওষুধ এবং হালকা স্ট্রেচিং কার্যকর। বাম হাতের মাংসপেশিতে ব্যাথা হলে করণীয় ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে দেওয়া হলঃ 

  • বিশ্রাম নিনঃ ব্যথা অনুভব করার সাথে সাথেই আক্রান্ত হাতটি ব্যবহার করা বন্ধ করুন। কমপক্ষে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত হাতকে বিশ্রাম দিন। বিশ্রামই সেরে ওঠার প্রথম ধাপ।
  • বরফ সেঁকঃ ব্যথার স্থানে প্রতিদিন ৩-৪ বার করে ১৫-২০ মিনিটের জন্য বরফ সেঁক দিন। এটি ফোলা এবং প্রদাহ কমাতে খুব সাহায্য করে।
  • কম্প্রেশন ও এলিভেশনঃ একটি ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ দিয়ে ব্যথার স্থানটি হালকাভাবে মুড়ে দিন। সেই সাথে হাতটি হৃদপিণ্ডের উচ্চতায় উঁচু করে রাখুন। এতে ফোলা কমতে সাহায্য হবে।
  • ব্যথানাশক ওষুধঃ যদি ব্যথা বেশি হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আইবুপ্রোফেন বা প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন।
  • হালকা স্ট্রেচিংঃ পেশিগুলো শিথিল করার জন্য কিছু হালকা ব্যায়াম বা মৃদু ম্যাসাজ করতে পারেন। তবে, এতে যেন ব্যথা না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
  • গরম সেঁকঃ ৪৮ ঘণ্টা পর যখন প্রাথমিক ফোলা কমে যাবে, তখন গরম পানির সেঁক দিতে পারেন। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে পেশি শিথিল করতে সাহায্য করবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শঃ যদি আপনার ব্যথা ৩-৪ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা তীব্রতা বাড়ে, তাহলে দেরি না করে একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ বা ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন। সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি।

তথ্যসূত্র লিংকঃ

  • Cleveland Clinic, Verywell Health, WebMD, myUpchar
  • Everyday Health, দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, Dallas Spine
  • Apollo Hospitals, প্রথম আলো, The Pain Center
  • প্রথম আলো, YouTube: How to Fix Arm Muscle Pain

বাম হাতের কব্জিতে ব্যথা এর কারণ কি? 

বাম হাতের কব্জিতে ব্যথা হওয়া,  এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যেমনঃ কার্পাল টানেল সিনড্রোম, আর্থ্রাইটিস, পুনরাবৃত্তিমূলক চাপ, হাড় ভাঙা বা মচকানো, ডি কোয়ারভেইন’স টেনোসাইনোভাইটিস এবং গ্যাংলিয়ন সিস্ট। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলঃ 

  • কার্পাল টানেল সিনড্রোমঃ যখন কব্জির ভেতরের মিডিয়ান স্নায়ু সংকুচিত হয়, তখন কব্জি, বুড়ো আঙুল ও তর্জনীতে ব্যথা আর অসাড়তা অনুভব হতে পারে।
  • আর্থ্রাইটিসঃ অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর মতো রোগগুলোতে কব্জির জয়েন্টে প্রদাহ হয়, যার ফলে ব্যথা ও শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
  • পুনরাবৃত্তিমূলক চাপঃ টাইপিং, ভারী সরঞ্জাম ব্যবহার বা খেলাধুলার সময় কব্জিকে বারবার নাড়াচাড়া করলে টেন্ডনে ইনজুরি হতে পারে, যা ব্যথার কারণ।
  • হাড় ভাঙা বা মচকানোঃ হঠাৎ করে পড়ে গিয়ে হাতের ওপর ভর দিলে কব্জির স্ক্যাফয়েড বা রেডিয়াস হাড় ভেঙে যেতে পারে, যা তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে।
  • ডি কোয়ারভেইন’স টেনোসাইনোভাইটিসঃ বুড়ো আঙুলের টেন্ডনে প্রদাহ হলে কব্জির বাইরের দিকে ব্যথা হয়।
  • গ্যাংলিয়ন সিস্টঃ টেন্ডন বা জয়েন্টের কাছে তরলপূর্ণ সিস্ট তৈরি হলে সেটির চাপে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ 

  • মেয়ো ক্লিনিক (আন্তর্জাতিক), হেলথলাইন (আন্তর্জাতিক)
  • ওএস ক্লিনিক (আন্তর্জাতিক), উইকিপিডিয়া (আন্তর্জাতিক)
  • প্রথম আলো (বাংলাদেশ), মেডিকোভার হসপিটালস (আন্তর্জাতিক)
  • জনস হপকিন্স মেডিসিন (আন্তর্জাতিক), এনআইএইচ (আন্তর্জাতিক)
  • জুগান্তর (বাংলাদেশ), এনটিভি অনলাইন (বাংলাদেশ)
  • স্যামোবাথি পেইন ক্লিনিক (বাংলাদেশ), অরোরা হেলথ কেয়ার (আন্তর্জাতিক)

ডান হাতের মাংসপেশীতে ব্যথার কারণ এবং এর ঔষধ কি?  

ডান হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো পেশির টান, স্নায়ু সংকোচন, ভিটামিনের ঘাটতি বা বিরল ক্ষেত্রে হৃদরোগ। চিকিৎসায় ব্যথানাশক, ফিজিওথেরাপি ও বিশ্রাম কার্যকর। আসুন, ব্যথার কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 

ডান হাতের মাংসপেশিতে ব্যথার কারণ

  • পেশির টান বা স্ট্রেনঃ ভারী জিনিস তোলা, অতিরিক্ত ব্যায়াম করা বা বারবার একই ধরনের কাজ করার ফলে পেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা টান বা স্ট্রেনের কারণ হয়।
  • কার্পাল টানেল সিনড্রোমঃ কব্জির ভেতরের মিডিয়ান স্নায়ুতে চাপ পড়লে ডান হাতে তীব্র ব্যথা ও অসাড়তা দেখা দেয়।
  • ভিটামিন ডি/বি১২ ঘাটতিঃ আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি বা ভিটামিন বি১২ এর অভাব হলে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ব্যথা হতে পারে।
  • ফাইব্রোমায়ালজিয়াঃ এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা, যেখানে শরীরের বিভিন্ন পেশিতে ব্যথা হয়, যার মধ্যে ডান হাতও থাকতে পারে।
  • হৃদরোগ (বিরল)-ঃ যদিও বিরল, তবে কখনো কখনো হৃদরোগের ব্যথা ডান হাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিশেষ করে যদি বুকে চাপ বা শ্বাসকষ্টের মতো অন্যান্য লক্ষণ থাকে।

ওষুধ এবং এর চিকিৎসা

  • ব্যথানাশক (NSAIDs)-ঃ ব্যথানাশক হিসেবে আইবুপ্রোফেন, ডাইক্লোফেনাক বা ন্যাপ্রোক্সেন জাতীয় ঔষধগুলো প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • টপিক্যাল জেলঃ ব্যথা কমানোর জন্য ডাইক্লোফেনাক জেল সরাসরি আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করা যায়, এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম হয়।
  • মাংসপেশি শিথিলকারীঃ যদি পেশিতে গুরুতর খিঁচুনি হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাইক্লোবেনজাপ্রিন এর মতো মাংসপেশি শিথিলকারী ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ফিজিওথেরাপিঃ ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি এবং নির্দিষ্ট স্ট্রেচিং ব্যায়াম পেশির ব্যথা কমাতে ও শক্তি বাড়াতে সহায়ক।
  • বিশ্রাম ও বরফ সেঁকঃ প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত আক্রান্ত হাতকে বিশ্রাম দেওয়া এবং বরফ সেঁক দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্যসূত্রঃ Cleveland Clinic, HSS, ASSH, PubMed, Drugs.com, Medical News Today, Apollo Hospitals, Healthgrades.

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা
  • ব্যথা ৭-১০ দিনের বেশি সময় ধরে থাকছে, কমছেই না।
  • হাত ফুলে লাল হয়ে গেছে অথবা হাত দিলে গরম লাগছে।
  • আঙুলগুলো অবশ লাগছে কিংবা সেগুলোতে জোর পাচ্ছেন না।
  • রাতে ব্যথার চোটে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, ঘুমাতে পারছেন না।
  • ব্যথার সাথে জ্বর আসছে বা শরীর কাঁপছে।

তথ্যসূত্রঃ 

  • WebMD (Hand Pain Causes), Pavilion Health Today (Hand Pain Red Flags)
  • University of Utah Health (When to See a Doctor), Barrington Orthopedic Specialists
  • Healthline (Hand Pain Causes), AllofPain (New Jersey Pain Management)
  • Apollo Hospitals (Arm Pain), New York Hand and Nerve Center
  • Medical News Today (Hand Pain Treatments), AMA (Carpal Tunnel Syndrome)

ব্যক্তিগত মতামত

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা কমানোর উপায় নিয়ে আমি নিজেও অনেকবার ভেবেছি। কারণ, হাতের ব্যথা সত্যিই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমার মনে হয়, এই ব্যথা কমানোর জন্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা খুব জরুরি।

প্রথমত, বিশ্রাম নেওয়াটা খুব দরকারি । এরপর যদি ফোলা থাকে, তাহলে ঠান্ডা সেঁক, আর পেশি শক্ত হলে গরম সেঁক দিতে পারেন । হালকা ম্যাসাজ আর কিছু সাধারণ ব্যায়ামও পেশি সচল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু ব্যথা যদি বাড়তেই থাকে বা ৭-১০ দিনের বেশি থাকে, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।

এই পোস্টটি যদি আপনার উপকারে আসে, তাহলে দয়া করে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন—হয়তো আপনার একটি শেয়ার কারো ব্যথা থেকে মুক্তির পথ খুলে দিতে পারে।

FAQ:

হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর

দুশ্চিন্তার কারণে কি হাতের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়?
কোন স্নায়ু রোগের কারণে পেশির খিঁচুনি হয়?
হাতের মাংসপেশি শক্ত হওয়ার কারণ কী?
কোন রোগের কারণে হাতের মাংসপেশি দুর্বল হয়?
হাতের মাংসপেশিতে টান নিরাময়ের উপায়?
Share this article
Shareable URL
Prev Post

ঘাড়ের রগ ব্যথা হলে করণীয়: কারণ,লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা

Next Post

গ্যাসের সমস্যা দূর করার সেরা ১২ টি ঘরোয়া উপায়: ১ মিনিটেই ঘরোয়া সমাধান!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *